স্তন ক্যান্সার কি? স্তন ক্যান্সারের কথা যদি বলতে যাই তবে যে কোনো নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। স্তনের কোনো জায়গায় যদি কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় তাহলে ঔ জায়গাটি টিউমার বা পিন্ডের আকার ধারণা করে। তারপর তা রক্তনালির লসিকা (কোষ-রস) ও বিভিন্ন মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই যে ছড়িয়ে পড়ার প্রবনতাই হচ্ছে ক্যান্সার। এখন আমরা জানবো, ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ, ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ, ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ, ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে করণীয়, ব্রেস্ট ক্যান্সার কি ভাল হয় কিনা? এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের স্টেজ।
স্তন ক্যান্সার এর কারণ সমূহ
বিভিন্ন কারনে ক্যান্সার হয়ে থাকে। তার মধ্যে রয়েছে জিনগত কারণ, বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের সংস্পর্শে আসা, ক্ষতিকারক রশ্মি ইত্যাদি কারণে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যান্সারের উল্লেখযোগ্য কারণগুলি নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলোঃ
১। পেশাগত কারণে সৃষ্ট ক্যান্সারঃ পেশাগত কারণে যদি কেউ দীর্ঘদিন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকে তাহলে তার (ডি এন এ) এর পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। এতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনই কিছু ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ হলো রেডিয়াম, অ্যাসবেস্টসের ও আলকাতরা ইত্যাদির সংস্পর্শে থাকলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২। ক্ষতিকর রাসায়নিক বিকিরণঃ সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি (অতি বেগুনি রশ্মি) , ইউ ভি রশ্মির সংস্পর্শে দীর্ঘদিন ধরে থাকলে ক্যান্সার হতে পারে। এই ধরুন মেলানোমা, ত্বকের বিভিন্ন ধরন ক্যান্সার হতে পারে।
৩। জৈবিক বা আভ্যন্তরীণ কারণে ক্যান্সারঃ অধিকাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স ৫০ বা তার অধিক হয়ে থাকে। ক্যান্সার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন হয় না যেকোন বয়সেই ক্যান্সার হতে পারে।
৫। যে সকল মহিলা বেশি বয়সে বিয়ে করে এবং বাচ্চা নিতে অনেক দেরি করে অথবা বাচ্চা নিতে চায় না। তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুকি বেড়ে যায়।
৬। যে সকল মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাই না বা দুধ খাওয়ানো তে অভ্যস্ত না। তাদের স্তন ক্যান্সার হতে দেখা গেছে।
৭। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া এবং শাকসবজি না খাওয়া। তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮। শারীরিক পরিশ্রম না করা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি স্তন ক্যান্সারের কারণ হয়ে থাকে।
৯। যদি কোনো ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত এয়ার ফ্রেশনার, কীটনাশক, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিকস, ডিওডোরেন্ট ইত্যাদি এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকবার ফলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
১০। ব্রা বা ব্রেসিয়ার সর্বক্ষণ পড়ে থাকালে ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ে। ব্রা সবসময় না পড়ে বাড়িতে অবস্থান করার সময় এবং ঘুমাতে যাওয়ার সময় অন্তত খুলে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
১১। ভুল সাইজের ব্রা ব্যবহার করার ফলে ক্যান্সার হতে পারে। স্তনের আকার অনুযায়ী সঠিক সাইজের ব্রা ব্যবহার করতে হবে। কোনো ভাবেই স্তনের যে সাইজ তার থেকে ছোট ব্রা ব্যবহার করা যাবে না। এর ফলে স্তনের তরল বাহী লসিকা গুলো কেটে ফেলতে পারে।
১২। জেনেটিক কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়া স্বাভাবিক। বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ নামের এই দুটি জিনের মিউটেশন যদি ৫% থেকে ১০% হয় তাহলে তা স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী থাকে।
১৩। স্তন ক্যান্সার হওয়ার আর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বংশগত কারণ। বংশে যদি ধারাবাহিক ভাবে মা, খালা, বোনের স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে তার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ গুলি কি কি?
ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে, তবে কিভাবে বুঝবো এটা ব্রেস্ট ক্যান্সার। ব্রেস্ট ক্যান্সার এর কিছু লক্ষণ রয়েছে এগুলো হলোঃ
- স্তনের যেকোনো অংশে চাকা চাকা ভাব দেখা যাওয়া।
- স্তনের আকার-আকৃতির অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা।
- স্তনের যে নিপল থাকে তার চারপাশে অংশের আকারে পরিবর্তন দেখা যাওয়া।
- নিপল থেকে কোনো অস্বাভাবিক তরল পদার্থ বের হওয়া, এটা লক্ষ করুন। অস্বাভাবিক কিছু বের হলে বুঝবেন ব্রেস্ট ক্যান্সার এর লক্ষণ।
- ব্রেস্ট ক্যান্সার এর ফলে ব্রেস্ট এর চারপাশে চাকা চাকা ঘাঁ দেখা যেতে পারে, এটা লক্ষ করুন।
- ব্রেস্ট ক্যান্সার এর ফলে ব্রেস্টের মধ্যে শক্ত গোলাকার কিছু অনুভব করা।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমার সাধারণত যে চিকিৎসা করতে দেখে থাকি। যেমনঃ ঔষুধ, অপারেশন, রেডিওথেরাপি।
ক্যান্সারের গঠনগত দিক বিবেচনা করে ডাক্তার তার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই ধরুন আগে অপারেশন করলো অথবা অপারেশন না করে ঔষুধ দিলো অথবা দেখা গেলো ঔষুধ সাথে রেডিওথেরাপি দিলো অথবা রেডিওথেরাপি দিয়ে অপারেশন করলো।
ঔষুধঃ
সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তার রেডিওথেরাপির দিয়ে থাকেম সাথে সাথে ঔষুধ দিয়ে থাকেন যা স্তন ক্যান্সারের যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাই তার প্রতিরোধক হিসেবে।
অপারেশনঃ
অপারেশন এর ক্ষেত্রে ডাক্তার স্তন থেকে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ টিস্যু কেটে নিবে অথবা সম্পুর্ন স্তনের টিস্যুই কেটে ফেলতে হতে পারে। এটা ক্যান্সার এর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। বোঝার ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো এই অপারেশন হয় দুই ভাবে
- স্তনে ক্যানসারের অংশটুকু অপসারণ অর্থাৎ (লাম্পেকটমি)।
- সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ অর্থাৎ (মাস্টেকটমি)।
রেডিওথেরাপিঃ
অপারেশন করার পর যখন ক্ষত শুকিয়ে যায় তখন সাধারণত রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে এতে ক্যান্সার ফিরে আশার ঝুঁকি কমে যায়।
স্তন ক্যান্সারের ছবি
উপসংহার
স্তন ক্যান্সার নিয়ে অনেক অনেক কথা রয়েছে, এক সাথে সকল কথা বলা সম্ভব হয়ে উঠে না তাই আজ এ পর্যন্ত। আবার স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে লেখা হবে অন্য কোনো আর্টিকেলে। সম্পুর্ন পড়ার জন্য ধন্যবাদ। স্বাস্থ বিষয়ে আরো তথ্য জানতে আমাদের সাইটের অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল পড়ুন।