চুল কেনো পড়ে ? চুল পড়া প্রতিরোধে করণীয় ও অকরণীয়

বর্তমান সময়ে চুলের প্রতি সবাই যত্নবান হতে শুরু করেছে। কারন চুলে হচ্ছে আভিজাত্যের প্রতীক। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। সাথে এটাও জানা জরুরী যে চুলে কি সমস্যা দেখা দিলে কি ভাবে তা প্রতিরোধ করতে হবে। নিচে চুলের বিভিন্ন সমস্যা এবং সাথে তার বিস্তারিত সমাধান তুলে ধরা হলো।

বর্তমান সময়ে চুলের প্রতি সবাই যত্নবান হতে শুরু করেছে। কারন চুলে হচ্ছে আভিজাত্যের প্রতীক। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। সাথে এটাও জানা জরুরী যে চুলে কি সমস্যা দেখা দিলে কি ভাবে তা প্রতিরোধ করতে হবে। নিচে চুলের বিভিন্ন সমস্যা এবং সাথে তার বিস্তারিত সমাধান তুলে ধরা হলো।

‌চুল কেন পড়ে?

চুল কেনো পড়ে যায়? এটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে, মুলত চুল পড়া কি? চুল পড়ে যাওয়ার পরে ঔ জায়গা থেকে নতুন চুল পুনরায় না গজালে তাকে চুল পড়ে যাওয়া বলে। চুল পড়া বর্তমান সময়ে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। চুল পড়ার অনেক গুলো কারণ ও আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, চুল কেন পরে?

চুল পড়ার কারণ সমূহ

১. চুল পড়ে যাওয়ার এই বিষয়টি এখন আমাদের প্রতিদিনের কাজ কর্মের সাথেও জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে আমরা কারণে অকারণে রাত জাগি। পড়াশোনা, অফিসের কাজ ইত্যাদি কারণে রাত জাগা হয়। মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকা, সবসময় দুশ্চিন্তা, হতাশাগ্রস্ত থাকা ইত্যাদি। এই বিষয় গুলো চুল পড়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

২. বর্তমান সময়ে দেখা যায় কিশোর ছেলেগুলো বিভিন্ন ধরনের স্টাইলে চুল কাটিয়ে থাকে। চুলে জেল দেয়,রং করে, চুল আয়রন করে ইত্যাদি। এসব করার কারণে চুলের সাথে যে জোর জবরদস্তি করা হয় এতে চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৩. চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো সঠিক পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া। বাইরের ফাস্টফুডে অতিরিক্ত তেল ও চিন জাতীয় দ্রব্য এবং ফ্রেশ খাবার না হওয়ায় পরিমিত পরিমান পুষ্টি পাওয়া যায় না। চুল গঠনে আমিষ, শর্করা, চর্বি ও পানির প্রয়োজন হয়। যেখানে চুলের ৯০% আমিষ দ্বারা গঠিত।

৪. প্রতিনিয়ত চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হয়। চুল যেহেতু আমিষ দ্বারা গঠিত আর শ্যাম্পুে ক্ষার থাকে, যা আমিষ ক্ষয় করে। ফলে চুলের ক্ষতি হয়।

৫. চুল পড়ার কারণের মধ্যে হরমোন এর সমস্যার জন্যেও চুল পড়ে।

৬. চুল পড়ার কারণের মধ্যে মাথার স্কালভে রক্ত চলাচল ঠিক ভাবে না হলে চুল পড়ে।

৭. পানির পরিবর্তনের কারণে চুল পড়ে। পানি পিএইচ সব জয়গায় ঠিক হয় না, যা চুলের উপর প্রভাব ফেলে।

৮. চুল পড়ার যে রোগ গুলে রয়েছে তার কারণে চুল পরেন। যেমন : স্যাভোরিক অ্যাক্সিমা, সোরিয়াসিস রোগে চুল পড়ে যায়।

৯. মাথায় খুশকির কারণেও চুল পড়ে।

১০. আপনাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে তা না হলে চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক।

‌ঘরোয়া পদ্ধতীতে চুল পড়া প্রতিরোধ

চুল পড়া প্রতিরোধ করার জন্য অনেকে অনেক ডাক্তার, মেডিসিন ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু কাজ হয় না। এতে আপনার সময় ও টাকা দুইটাই নষ্ট হয়।

আসুন চুল পড়া প্রতিরোধে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি জেনে নিই। ৫ টি ঘরোয়া পদ্ধতিঃ

১. নারিকেল তেল দ্বারা মাথা ম্যাসাজ করা। এতে আপনার মাথায় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে।

২. চুল পড়া বন্ধ করার জন্য অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যায়। অ্যালোভেরার জেল ব্লেন্ডার করে ঘন্টা খানেক সময় মাথায় রাখতে হবে। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। এর ফলে চুল পড়া কমবে সাথে মাথায় চুলকানি হবে না।

৩. চুল পড়া বন্ধ করার সাথে দ্রুত চুলের বৃদ্ধির জন্য ডিমের কুসুম, অলিভওয়েল, লেবুর রস মিক্সিং করে ঘন্টা খানেক সময় মাথায় রাখতে হবে। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে।

৪. সরিষার খৈল অরিজিনাল খৈল মাথায় দিয়ে ২০/২৫ মিনিট রাখতে হবে। তার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৫. পেঁয়াজের রস ১৫/২০ মিনিট চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রেখে দিতে হবে।তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে।

‌চুলের যত্নে করণীয়

চুল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম কারণ। তাই আমাদের চুলের যথাযথ যত্নের প্রয়োজন। চুলের যত্নের জন্য কয়েকটি ট্রিপসঃ

১. প্রচুর পরিমানে পানি পান করা। কারণ চুলের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পানি। বিশেষ করে শীতকালে বেশি করে পানি পান করতে হবে।
২. প্রচুর শাক-সবজি খেতে হবে।
৩. ফাস্টফুড এভয়েড করতে হবে।
৪. চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
৫. মাথায় তেল দিতে হবে।যেমন : নারিকেল তেল, অলিভওয়েল।
৬. মাথায় জেল দেওয়া যাবে না। রং করা যাবে না।
৭. শারীরিক চর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করতে হবে।
৮. ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, বিশেষ করে চুলের জন্য ভিটামিন (E) সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

‌চুল কেন পাতলা হয়ে যায়

সাধারণত চুল পাতলা হওয়ার মুল কারন চুল পড়ে যাওয়া। চুল পড়ে গেলে চুলের ঘনত্ব কমে যায়, তাই চুল পাতলা হয়ে যায়। চুল পড়ার কারণ হচ্ছে মাথায় খুশকি হওয়া, রাত জাগা, অতিরিক্ত চিন্তা করা, পুষ্টির সল্পতা ইত্যাদি কারণে চুল পাতলা হয়ে যায়।

‌চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে যা করণীয়

জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়রন বায়োটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এই উপাদান সমূহ চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য আমাদের খাদ্য তালিকাই এই সকল উপাদান সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে । এই উপাদান সমূহ যে খাবার গুলাতে সবচেয়ে বেশি পরিমানে থাকে, এমন ৫টি খাদ্যের তালিকা নিম্নে দেয়া হলোঃ

ডিম

প্রোটিন, ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন। যা চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।সালফার, আয়রন, সেলেনিয়াম ও জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় সব উপাদান । মাথার স্ক্যাল্পের রক্ত চলাচল করতে আয়রন সাহায্য করে , জিঙ্ক চুল মজবুত করে।

ডাল

ডাল থেকেও প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যায় । ক্যারাটিন নামক প্রোটিনে তৈরি আমাদের চুল। এজন্য চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। ডাল এটি মেটাবলিজম, সারকুলেশন বাড়ায় এবং কোষে অক্সিজেনের যোগান দেয়। ফলে চুলের ফলিকলগুলো সুস্থ থাকে।

সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি

সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি যেমন( পালং শাক, বাঁধাকপি,সরিষার পাতা শাক,মুলার গাতা শাক) ইত্যাদি।এগুলো থেকে আয়রন, ভিটামিন সি এবং বেটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় যা চুলের বৃদ্ধিতে ও আর্দ্রতা রক্ষায় সাহায্য করে আরও চুলের রং ঠিক রাখে ও উজ্জ্বল রাখে।

দই

দইতে রয়েছে ভিটামিন বি ও ভিটামিন ডি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দই থাকা ভালো। চুলের স্বাস্থের জন্য ভিটামিন বি প্রয়োজন।

আয়োডিন যুক্ত খাদ্য

চুলের জন্য আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর পরিনামে আয়োডিন।

চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য বাইরে থেকে ট্রিটমেন্ট করে যথেষ্ট কাজ হবে না। পর্যাপ্ত পরিমানে চুলের যত্নেের জন্য খাদ্যের সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে তাহলেই চুল সুস্থ থাকবে।

‌অ্যালোপেশিয়া কি?

অ্যালোপেসিয়া হচ্ছে, আমাদের মাথা থেকে স্বাভাবিক ভাবে যে পরিমাণ চুল পড়ে এবং সে সকল জায়গা থেকে যদি নতুন কোনো চুল না গজায় তাহলে তাকে অ্যালোপেসিয়া বলে। তবে এনএইচএস বলে দৈনিক একটি মানুষের ৫০/১০০ চুল পড়া স্বাভাবিক বিষয়। অ্যালোপেসিয়া রোগের কারণে মানুষ সম্পূর্ণ টাক হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।

কী দেখলে বুঝবেন অ্যালোপেশিয়া হয়েছে?

সাধারণত চুল পরা শুরু হয় নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর থেকে। তবে অ্যালোপেশিয়া রোগ হলে হঠাৎ করেই যে কোনো বয়সে চুল পড়া শুরু হতে পারে। নারী পুরুষ সবারই যে কোনো বয়সে অ্যালোপেশিয়া রোগে হয়ে চুল পড়তে পারে। অ্যালোপেশিয়া রোগের কারণে সারা শরীর থেকে চুল এবং লোম পড়তে শুরু করে। ভুরু, চোখের পাপড়ি ও গায়ের লোম পড়া শুরু হয়। এমন সব ঘটনার সম্মুখীন হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

‌চুল পড়া বন্ধে করণীয়

একটি মানুষের দৈনিক ৫০/১০০ টি চুল পড়ে যেতে পারে। আর আমরা জানি এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে অস্বাভাবিক হারে যদি চুল পড়ে তাহলে আমাদের কি কি করণীয় থাকতে পারে।

‌চুল পড়া বন্ধে কি কি করণীয় চলুন যেনে নেওয়া যাকঃ

১. চুল পড়া বন্ধের জন্য চুলকে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। মাথায় স্ক্যালপে হাত কম দিতে হবে, কারণ এতে ময়লার সঞ্চালন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. ভিটামিন ( E, C, D) সমৃদ্ধ খাবার, ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার, সবুজ শাকসবজি, বিশেষ করে আমিষ জাতীয় খাবার এবং পানি নিয়মিত খেতে হবে পরিমান অনুযায়ী।
৩. চুলে নারিকেল তেল দ্বারা ম্যাসাজ করতে হবে।
৪. নারিকেল তেল কুসুম গরম করে তাতে মেথি দিয়ে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা হওয়ার পরে তা ব্যবহার করতে হবে।
৫. চুল পরিষ্কার রাখতে সরিষার খৈল দিতে পারেন। এতে অনেক ভালো কাজ হয়। চুল পড়া কমে, চুল কালো হয়, চুলের গোড়া মজবুত করে।
৬. চুলে অলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

উপরে উল্লিখিত এই প্রক্রিয়া গুলো চুল পরা কমাতে সাহায্য করবে।

‌মাথায় খুশকি কেন হয়

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে মাথায় খুশকি হওয়া। খুশকির ফলে চুল পড়ে যায়। মাথায় খুশকি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। বর্ষাকালে এবং শীতকালে খুশকির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমানে সারা বছরই খুশকি দেখা দিচ্ছে কারণ বর্তমান আবহাওয়া, রাস্তায় ধুলাবালির প্রাদুর্ভাব, মাথায় পরিষ্কার না থাকা ইত্যাদি। চলুন খুশকি হওয়ার বিশেষ কিছু কারণ জেনে নেওয়া যাক।

ফাঙ্গাল ইনফেকশন

খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ফাঙ্গাল ইনফেকশন। ফাঙ্গাল ইনফেকশন চিরুনি এর মাধ্যমে ছড়াতে পারে। মাথার তকে ঘাম জমে থাকলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।

চুলে ময়লা জমলে

আমারা প্রতিদিন -ই কাজ এর জন্য বাইরে যায়। ফলে মাথায় ময়লা হওয়া স্বাভাবিক। তবে এই ময়লা মাথায় জমতে দিতে থাকলে মাথায় খুশকি হবে।

গরম পানি দিয়ে গোসল করলে

গরম পানি মাথায় ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, তাই গরম পানি ব্যবহার না কারা ভালো।

ত্বকের ধরন

এক একজনের মাথার ত্বক এক একরকম। এর মধ্যে যাদের মাথার ত্বক তৈলাক্ত তাদের মাথায় ময়লা বেশি জমে ফলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাথাই তৈল জমতে দেওয়া যাবে না।

খাদ্যাভ্যাস

আমাদের খাবার আমাদের ত্বক ও চুলের উপর অনেক প্রভাব ফেলে। তাই সঠিক পুষ্টি মান সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।পুষ্টির অভাবে খুশকি হওয়া ও চুল পরে।

মানসিক চাপ

দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় যার ফলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাই। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ত্বকের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।ফলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

‌চুলের যত্নে প্রশাধনী

সুন্দর চুলের প্রতি সকলেই আকৃষ্ট হয়। সুন্দর চুল সৌন্দর্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এখন যদি এই চুলেরই যত্ন না নেওয়া হয় তাহলে সৌন্দর্যে ঘাটতি তো থেকে যাবে।তাই এই সুন্দর চুলের যথাযথ যত্ন নিতে হবে।

চলুন তাহলে যেনে নেওয়া যাক চুলের যত্নে প্রসাধনী ব্যবস্থা সমূহঃ

চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানের চেয়ে ভালো প্রসাধনী আর কি হতে পারে। চুলের বিভিন্ন ধরন ও করণ রয়েছে তাই আপনি আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী নির্বাচন করে নিতে পারেন আপনার প্রসাধনী।

ত্রিফলা

এিফলা হচ্ছে তিন ধরনের ফলের মিশ্রনকে বলা হয়। ফলগুলো হলো আমলকী, হরীতকী আর বহেড়া এই তিনটি ফল । এই প্রাকৃতিক প্রসাধনীতে রয়েছে বিশেষ গুণ সম্পুর্ন উপাদান। যা চুলকে করবে ঘন, লম্বা ও কালো। এই এিফলা রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং পরের দিন তা বেটে ঘন্টা খানেক চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

মেথি

মেথি একটি সুগন্ধি ভেষজ। এই মেথি চুলের জন্য অনেক উপকারী। মেথিকে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে তারপর পরের দিন মেথি যখন নরম হয়ে যাবে তখন একটি আমলকী বিচি ছাড়িয়ে মেথির সাথে মিহি করে বেটে নিতে হবে। তারপর তা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখতে হবে ঘন্টা খানেক। চুল পড়া প্রতিরোধ অব্যর্থ এটি।

মেহেদী

সৌন্দর্য উপাদান হিসেবে মেহেদী বা হেনা ব্যবহার করা হয়। এই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, ঝলমলে করে তোলে, চুলের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব ও খুশকি দূর করে। মাথায় মেহেদী দিলে মাথা ঠান্ডা থাকে কারণ এতে গ্লোকোজ থাকে।

জবা

এই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান চুল পুন-উৎপাদন করতে সাহায্য করে। এটি হচ্ছে চুলের টনিক যা চুলকে ঘন করে তেলে। জবার তেল খুব উপকারী।

নিম

এই নিম প্রাচিন কাল থেকেই ব্যবহারে হয়ে আসছে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে। নিম তেলের প্রধান উপাদান হলো সালফার। সালফারে রয়েছে ভিটামিন 'ই' যা চুলকে মজবুত করে তোলে এবং অকাল অপরিপক্কতা থেকে রক্ষা করে।

লেবু

লেবু অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভেষজ উপাদান। লেবু চুলের খুশকি প্রতিরোধ অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান।

নারিকেল তেল

যে কোনো নারিকেল তেলই চিলের জন্য ভালো কারন এতে রয়েছে ভিটামিন ই, স্কুয়ালেস থাকে যা চুলকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখে।

‌গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন

একজন নারীর জন্য মা হওয়ার থেকে খুশির আর কি হতে পারে। হাজারো স্বপ্ন বাঁধে তার সন্তানকে ঘিরে। আনন্দে ভরে ওঠে তার জীবন। তবে এই সময়ও সে মা দুশ্চিন্তা করতে থাকে মানসিক চাপ থাকে তার উপর। নানান কারনে চুল উঠে যেতে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় চলের যত্ন নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন নিতে যা যা করা উচিত।

  • হেড ম্যাসাজ করা।
  • চুলে তেল ব্যবহার করা।
  • চুলে কালার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • মেহদী বেটে মাথায় দেওয়া।
  • পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খাওয়া।
  • সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করা।
  • ভেজা চুল চিরুনি দেওয়া যাবে না।

‌যে সকল খাবার খেলে চুল বড় হয়

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। চুল গঠনে হয় ৯০% আমিষ দ্বারা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন চুলের জন্য আমিষের কতটা গুরুত্ব রয়েছে। চুলকে সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই।

তাহলে চলুন জানা যাক কি কি খাবার খেলে চুল বড় হয়ঃ

ডিম

ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন। চুল যেহেতু প্রোটিন দিয়ে তৈরি সেহেতু প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে পারলে ভালো হয়।

পালংশাক

পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। শরীরের যখন আয়রনের অভাব হয় তখন চুল পড়তে শুরু করে। তাই পালংশাক খাওয়া চুলের জন্য অনেক উপকারী।

কুমড়া

কুমড়া জাতীয় সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিন। যা চুলকে দ্রুত লম্বা হতে সাহায্য করে।

এভোকাডো

এভোকাডো এই ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন ই, যা চুলের জন্য অনেক উপকারী। ভিটামিন ই চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।

গাজর

গাজরে রয়েছে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ কোষ গঠনে সহায়তা করে। দ্রুত চুল লম্বা করতে চাইলে প্রতিদিন গাজরের জুস খাওয়ার বিকল্প নেই অন্তত প্রতিদিন এক গ্লাস করে গাজরের জুস খেতে হবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলতে চাই চুল নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে হবে এবং সেটাও ধৈর্যের সাথে। চুলের সমস্যা জেনে তার পর সেই সমস্যা অনুযায়ী চুলের সমস্যার সমাধান করতে হবে। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। চুলে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না কারন তাতে ক্ষার থাকে যা মাথার স্ক্যাল্প এবং চুলের জন্য মোটেই ভালো নয়, তাই সপ্তাহে ২/৩ দিন এর বেশি ব্যবহার করা যাবে না। প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান চুলে ব্যবহার করলে ভালো হয়, এতো কোনো পার্শো প্রতিক্রিয়া থাকে না।

আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার উপকারিতা
Previous Post Next Post