ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত? এই সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা হবে। ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার সতর্কতার সাথে খেতে হয়। সুস্থ থাকার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত? এ সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেওয়া প্রয়োজন। এই আর্টিকেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত? সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কি? ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কোন ডায়েট ভালো, ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক কতটুকু খাওয়া উচিত, ডায়বেটিকস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত?

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত? এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক। যদি বিষয়টি জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত জেনে রাখুন

আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। ডায়াবেটিস একটি মরণব্যাধি যদি এটি নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায় তাহলে অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের অনিয়ন্ত্রিত খাবারের ফলে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস কমবেশি হতে পারে। তাই আমাদেরকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ঠিক তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম করা এবং ডায়েট চাট নিয়ন্ত্রণে রাখা। ডায়াবেটিস রোগ এমন একটি অসুখ যদি একবার আপনার হয়ে যায় তাহলে আপনাকে সারা জীবন এটা সঙ্গে নিয়ে বাঁচতে হবে। তাই এর রোগ হওয়ার আগে আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

একজন ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন খাবারের মোট ক্যালরির মধ্যে ৪০% কার্বোহাইড্রেট, ৪০% ফ্যাট এবং ২০% প্রোটিন থাকা জরুরী। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত তার নিচে উল্লেখ করা হলো।

১। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি এছাড়া পানির সাথে অর্ধেক চামচ মেথির গুড়া মিশিয়ে পান করা উচিত।

২। এর কিছুক্ষণ পরে চিনি ছাড়া এক কাপ চা এবং চায়ের সাথে হালকা মিষ্টি যুক্ত বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে।

৩। সকালের নাস্তা হিসেবে সবজি এবং এক গ্লাস দুধ খাওয়া একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪। বেলা বাড়লে ছোট ফল অথবা লেবুর জল খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫। দুপুরের খাবার হিসেবে এক বাটি ভাত, এক বাটি ডাল, এক বাটি দই এছাড়া অর্ধেক বাটি সোয়াবিন অথবা পনিরের তরকারি কিন্তু বেশি পরিমাণে সবজি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৬। বিকেলের নাস্তা হিসেবে সুগার ফ্রি বিস্কুট অথবা এক কাপ চা অবশ্যই চিনি ছাড়া হতে হবে এর সাথে বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে।

৭। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে এক কাপ সুপ খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কার্যকরী।

৮। রাতের খাবার হিসেবে দুইটি রুটি, এক বাটি ভাত এবং একবাটির ডাল এবং এক বাটি সবুজ শাকসবজি এছাড়া স্যালাড খাওয়া যেতে পারে।

৯। রাতের খাবার অবশ্যই হালকা খাওয়া উচিত এবং খাবারের মাঝে দীর্ঘ বিরতি দেওয়া উচিত নয়। নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত কারণ ব্যায়ামের মাধ্যমে সুগার নিয়ন্ত্রণ থাকে।

১০। ডায়াবেটিস রোগীর সব সময় নিজের সাথে কোন মিষ্টি জাতীয় যেমন গ্লুকোজ, চিনি, চকলেট মিষ্টি বিস্কুট রাখা উচিত। যদি কখনো ডায়াবেটিস একবারের নিম্ন হয়ে যায় তখন এ ধরনের খাবার খেয়ে ডায়াবেটিস একটু হাই করা সম্ভব।

ডায়াবেটিস রোগীদের যে সকল খাবার খাওয়া যাবেনা

ডায়াবেটিস রোগ এমন একটি মারাত্মক রোগ যদি কারো একবার হয়ে যায় তাহলে এখান থেকে নিস্তার পাওয়ার আর কোন উপায় নেই। যতদিন পৃথিবীতে জীবিত থাকবে ততদিন ডায়াবেটিসের রোগীকে সঙ্গে নিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বেশ কিছু কাজ রয়েছে যেমন ব্যায়াম করা খাবার সঠিকভাবে খাওয়া এই কাজগুলো সঠিকভাবে করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

সেজন্য প্রথমে আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত? প্রতিটি রোগীর এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনের জানা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের যে সকল খাবার খাওয়া যাবেনা সেগুলো হলঃ

১। কখনোই বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া যাবেনা। এটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর।

২। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবেনা।

৩। যেসকল খাবার এবং পানির মধ্যে চিনি পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো খাওয়া যাবে না।

৪। প্রতিদিন দুই কাপের বেশি চাপা কফি খাওয়া উচিত নয়।

৫। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া এবং তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।

৬। যদি দুধ এবং পনির খেতে হয় তাহলে অবশ্যই ফ্যাট কমিয়ে খেতে হবে।

৭। ভাত আলু, কলা এবং গাজর রক্তে চীনের পরিমাণ বাড়ায় সুতরাং এগুলো কম খেতে হবে।

কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট তৈরি করবেন

ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ রাখার জন্য কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট তৈরি করবেন? এ সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই ধারনা রাখতে হবে। একটি ডায়েট চার্ট তৈরি করার সময় একটি সাধারণ ভুল হলো রোগীকে সম্পূর্ণরূপে কাঁচা শাকসবজি এবং ফল গোটা শস্যের শস্য ইত্যাদিতে পূর্ণ একটি মসৃণ খাদ্য পরিবর্তন করা। কিন্তু রোগীর অবস্থান বিবেচনা করে অবশ্যই ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগের ইতিহাস - ডায়াবেটিস রোগের ছয়টি লক্ষণ

ডায়বেটিস রোগের জন্য খাবার পরিকল্পনা করার সময় অবশ্যই সকল ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ছোট অংশ করে। কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট তৈরি করবেন? এবং কোন ধরনের খাবার রাখবেন? বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

১। সবুজ শাকসবজি - ভুট্টা, মটর, আলু, ব্রকলি, সবুজ শাকসবজি এবং গাজর। এই ধরনের খাবারগুলো একজন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

২। ফলমূল - ডায়াবেটিস রোগীর জন্য যে সকল ফল উপকারি যেমন কমলা, আপেল, কলা, আঙ্গুর।

৩। কম চর্বিযুক্ত খাবার - কম চর্বি যুক্ত খাবার যেমন দুধ, দই এবং পনির খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এবং এগুলো খাওয়ার সময় অবশ্যই ফ্যাট কমিয়ে খেতে হবে।

৪। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার - প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাংস, মাছ, শুকনো মটরশুটি ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৫। বাদাম জাতীয় খাদ্য - ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিন 30 গ্রাম পর্যন্ত বাদাম খেতে পারেন। বাদামে আপনার যদি কোন ধরনের সমস্যা না থাকে যেমন হাই কোলেস্টেরল বা এলার্জি তাহলে আপনি অনায়াসে বাদাম খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারী খাবার

পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম করা সহ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত? এই সম্পর্কে জেনে সে ধরনের খাবারগুলো খাওয়া একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই জরুরী। কারণ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী খাবার গুলো খেলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

  • সবুজ শাকসবজি
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল
  • ডিম
  • মাছ
  • গরুর মাংস
  • মুরগির মাংস
  • দুধ এবং পনির

সবুজ শাকসবজি - ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সবুজ শাকসবজি। যদি ডায়াবেটিস না থাকে বা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সবুজ শাকসবজি খেয়ে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে নিন। শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরী। সবুজ শাকসবজির মধ্যে রয়েছে পালং শাক, মটরশুটি, লাউ, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ফল - বেশ কিছু ফল রয়েছে যেগুলো শুধু ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এর ফলগুলো খাবেন। যে সকল ফল উপকারি যেমন কমলা, আপেল, কলা, আঙ্গুর।

ডিম - ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখতে হবে সেটি হলো ডিম। সব ধরনের ডিমে সর্বাধিক প্রোটিন এবং ফ্যাট কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই শর্করার পরিমাণ একদম কম থাকে যাকে নো সুগার কার্বোহাইড্রেট ও বলা হয়।

মাছ - মাসের মধ্যে রয়েছে আমিষ ওখানে উপাদান ও জিরো কার্বোহাইড্রেট। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মাছ অনেক উপকারী এবং ভালো একটি খাদ্য। মাছ খেলে ব্লাড সুগার বাড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় অবশ্যই মাছ রাখুন।

গরুর মাংস - গরুর মাংসের শর্করার পরিমাণ অনেক কম থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় এটি দেখা গিয়েছে কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে গরুর মাংস বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য গরুর মাংস খাওয়া উচিত কিন্তু অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ উপায়।

মুরগির মাংস - মুরগির মাংস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী বলা যায়। কারণ মুরগির মাংস হলো নো সুগার ফুড। বেশি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে খুব সহজেই আপনি আপনার খাবার তালিকায় মুরগির মাংস রাখতে পারবেন।

দুধ এবং পনির - দুধ এবং পনির ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে চর্বি থাকে না। এই দুইটি খাদ্য কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান ২-৪ গ্রাম হয়ে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীর জন্য দুধ এবং পনির খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে

আমাদের শেষ কথাঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট তৈরি করবেন? ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়েট চার্ট কেমন হওয়া উচিত? ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারী খাবার এবং ডায়াবেটিস রোগীদের যে সকল খাবার খাওয়া যাবেনা সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগী এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের জন্য উক্ত বিষয়গুলো জানা জরুরী।

2 Comments

Previous Post Next Post