কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় আমরা অনেকেই এ বিষয়টি জানিনা? এইডস মরণব্যাধি একটি রোগ। এর নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ রয়েছে কিন্তু কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? এ সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? সে বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
এইডস রোগের লক্ষণ ও কারণ কী?
এইডস হলো একটি মরণব্যাধি রোগ। সাধারণত এইচআইভি ভাইরাস এর আক্রমণ করার কারণে এইডস রোগ হয়ে থাকে। এইচআইভি মানে ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। বর্তমান চিকিৎসা শাস্ত্র এত বেশি উন্নত হওয়া সত্বেও এখনো এইডস রোগের কোন চিকিৎসা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তাই আমাদেরকে এইচআইভি ভাইরাস থেকে বাঁচতে হবে। এর জন্য এইডস রোগের লক্ষণ ও কারণ কী? সে সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
এইডস রোগের কারণঃ
১। এই রোগের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক করা। যদি এইচআইভি ভাইরাস বাহক কোন আক্রান্ত রোগীর সাথে নিরাপদ যৌন সম্পর্ক করা হয় তাহলে অপর ব্যক্তির এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
২। এছাড়া এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত এমন কোন রোগীর রক্ত যদি এ রোগে আক্রান্ত না এমন কোন রোগের শরীরে দেওয়া হয় তাহলে তার এইডস রোগ হতে পারে।
৩। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে মাদক সেবন সহ মদ্যপান করার কারণে অনেক সময় এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৪। যদি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো মায়ের দুধ কোন বাচ্চা খেয়ে থাকে তাহলে সেই বাচ্চার এইডস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
৫। বীর্য অথবা রক্তের মাধ্যমে যদি এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে এইডস রোগ হয়ে থাকে।
এইডস রোগের লক্ষণ সমূহঃ
১। ঘন ঘন জ্বর হওয়া এবং এই জ্বর দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী থাকা। গলা অস্বাভাবিক ব্যথা করা। খাবার খাওয়ার সময় সেগুলো গিলতে অনেক সমস্যা হওয়া।
২। ঘুমের মধ্যে ঘাম হওয়া। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুকনো কাশি হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়।
৩। অল্পতেই বমি বমি ভাব হওয়া অনেক সময় বমি হওয়া। সাধারণত এটিকে এইডস রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি এরকম হয় তাহলে অবশ্যই এইচআইভি পরীক্ষা করতে হবে।
৪। ক্লান্তি হওয়া এবং মাথাব্যথা করা। একটুতেই শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। সব সময় অলসতা বোধ করা। একটু হাঁটলেই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া।
৫। বৃদ্ধ বয়সে শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হতে পারে কিন্তু কারো যদি এইডস রোগ হয় তাহলে অনেক সময় শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথা করা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই ফুসকুড়ি গুলো চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
৭। কোনো কারণ ছাড়াই অকারণে দুশ্চিন্তা করা কান্নাকাটি করা এবং সব সময় মন খারাপ থাকা এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়
সাধারণত যাদের উপরের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তারা কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। যেহেতু এটি মরণব্যাধি রোগ এবং এইচআইভি আক্রমণ করার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। যদি এই ভাইরাস আক্রমণ করে তখন বোঝার কোন উপায় নেই। কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? তা জেনে রাখতে পারলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।
একজন মানুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে কিছু কিছু প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে শুরু করে। ব্যাক্তি ভেদে লক্ষণগুলো আলাদা হতে পারে। অনেক ব্যক্তির ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় অসুস্থতা প্রকাশের দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে বেড়ে যায় যখন অন্য কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ থাকে।
প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গলা ব্যথা করা, ফুসকুড়ি ওঠা, মাথা ব্যথা হওয়া, শরীর সবসময় ক্লান্ত হয়ে থাকা। এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এইচআইভি আক্রমণ করার পরে ধীরে ধীরে এ রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথমে এর ছোট ছোট লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় এরপরে যেগুলো লক্ষণ বড় এবং মারাত্মক সেগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
এইডস রোগের উৎপত্তি কোথায়
এইডস রোগের উৎপত্তি কোথায়? আমরা হয়তো বেশিরভাগ মানুষই এই তথ্যটি সম্পর্কে অবগত নয়। কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? এ বিষয়টি জানার সাথে সাথে অবশ্যই আমাদেরকে এইডস রোগের উৎপত্তি কোথায়? সে সম্পর্কে জানতে হবে। যেহেতু এটি মরণব্যাধি তাই আমাদের উচিত এ রোগ থেকে নিজেকে সাবধানে রাখা।
এইচআইভি - ১ এবং এইচআইভি - ২ উভয় ধরনের ভাইরাসই পশ্চিম-মধ্য আফ্রিকার অ-মানব প্রজাতির প্রাণী থেকে উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়, যেগুলি ২০শ শতকের প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। এইচআইভি - ১ ভাইরাসটি দক্ষিণ ক্যামেরুনে সিআইভি নামক ভাইরাসের বিবর্তনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়েছে বলে মনে করা হয়।
সিআইভি হল সিমিয়ান ইমিউনোডফেসিসিস ভাইরাস তথা "বানরজাতীয় প্রাণীর প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস" যা বন্য শিম্পাঞ্জিকে সংক্রামিত করে। এইচআইভি - ২ এর নিকটতম আত্মীয় SIV, সোটি ম্যাগাজি এর একটি ভাইরাস, উপকূলীয় পশ্চিম আফ্রিকায় বসবাসকারী একটি পুরানো বিশ্বের বানর।
নতুন বিশ্বের বানর যেমন আওল বানর এইচআইভি - ১ সংক্রমণ প্রতিরোধী, সম্ভবত দুটি ভাইরাস প্রতিরোধক জিনের একটি জেনোমিক সংযোজক তাদের দেহে বিদ্যমান। মনে করা হয় এইচআইভি - ১ ভাইরাস অন্ততপক্ষে তিনটি পৃথক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এম, এন এবং ও-এর তিন গ্রুপের ভাইরাসকে উৎসাহিত করে।
আফ্রিকার বেলজিয়ান কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসা থেকে ১৯২০ সালের দিক প্রথম এইচআইভি ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে। হাজারো মানুষের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে এই প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা। মধ্য আফ্রিকার দেশ বেলজিয়ান কঙ্গো ১৯০৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বেলজিয়ানদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল।
এই এলাকা থেকে সর্বপ্রথম আফ্রিকায় এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ে বলে গবেষকেরা দাবি করেন। সাধারণত রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখান থেকে রিচ আইভি ভাইরাস আফ্রিকার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বের মধ্যে আফ্রিকায় সবথেকে বেশি এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছে। এটা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে মহামারী আকারে।
তথ্যঃ উইকিপিডিয়া
এইডস রোগ নির্ণয়
কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? এতে জানার পরে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে এইচআইভি ভাইরাস এইডস রোগ নির্ণয় করতে হবে। এইচআইভি পরীক্ষাগার পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। তারপরে নির্দিষ্ট লক্ষণ বা লক্ষণের উপস্থিতির ভিত্তিতে মঞ্চস্থ হয়। যেহেতু এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস উভয় রোগের কোন নিরাময় নেই তাই চিকিৎসাশাস্ত্রে এখান থেকে কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না।
কিন্তু এইডস রোগ নির্ণয় করার জন্য আমাদেরকে প্রথম এইচআইভি ভাইরাস পরীক্ষা করতে হবে। এর জন্য আলাদা টেস্ট অথবা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। রক্ত পরীক্ষা এবং কিছু ঘরোয়া পরীক্ষার অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
আমাদের শেষ কথাঃ কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়
প্রিয় পাঠক গণ আজকের এই আর্টিকেলে এইডস রোগের উৎপত্তি কোথায়? কতদিন পর এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়? এইডস রোগের লক্ষণ ও কারণ কী? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের সঙ্গে ছিলেন সাধারণত তারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য অবশ্যই আমাদের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা উচিত। কারণ কখন কার কোন ধরনের রোগ হয়ে যাবে এটা বলা যাবে না। তাই আগে থেকেই নিজেকে সতর্ক রাখা খুবই জরুরী।