আমাদের মধ্যে অনেকেই মুখের দুর্গন্ধের শিকার হয়ে থাকি। আর এই অবস্থায় যখন আমরা কারো সাথে কথা বলে থাকি তখন তাদের অবস্থা দেখলে অনুধাবন করা যায় যে, তারা আমার বা আপনার সাথে কথা বলতে কতটা বিব্রত বোধ করছে। এছাড়াও হয়তো খেয়াল করে থাকবেন আপনার অনেক কাছের মানুষ বা আপনার প্রিয়তমা ও আপনাকে এই মুখের দুর্গন্ধের কারণে এড়িয়ে যেতে চাইছে। এতে অনেক সময় আপনি লজ্জিত হয়ে থাকেন। কিন্তু আজকে এই আর্টিকেলটি করার পর আপনি আপনার মুখের দুর্গন্ধ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
মুখের দুর্গন্ধ সমস্যাটা খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সমস্যা রয়েছে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব: মুখের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ সমূহ, মুখের দুর্গন্ধ দূর করার সহজ উপায়, স্থায়ী ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় সমূহ, বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার সাথে মুখের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক এবং দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ সমূহ
মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার বেশ কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করছি। যাতে আপনি মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণগুলো অনুধাবন করতে পারেন:
১। মুখে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব: ধরুন আপনি খাবার খেলেন, খাবার খাওয়ার পর যদি আপনি ঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার না করেন বা ব্রাশ অথবা কুলি না করেন। তাহলে এই খাবারের ছোট ছোট কণা গুলি দাঁতের বিভিন্ন ফাঁকে গিয়ে আটকে থাকে। আর কিছু সময় পরেই সেখানে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ হয় দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। আর আপনি যদি নিয়মিত ব্রাশ না করেন তাহলে দেখবেন আপনার দাঁত হলুদ হয়ে যায়। মানে হলুদ কালারের একটা লেয়ার আপনার দাঁতের ভাগে দেখা যায়। আরে হলুদ কালারের লেয়ারের কারণে আপনার দাঁতের মাড়ি এবং দাঁতের বাহিরের অংশ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায় এবং একটা সময় দাঁতে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়। একটা সময় এসে আপনার দাঁত দিয়ে কিছু খেলে দাঁত শিরশির করে। মাড়িতে ব্যথা অনুভূত হয়। আরো দেখবেন মুখ থেকে অনেক বেশি দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
২। মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করার আরেকটি কারণ হচ্ছে খাবার গ্রহণ। এখন আপনারা বলতে পারেন খাবার গ্রহণ না করে কিভাবে থাকবো। না আমি খাবার না খাওয়ার কথা বলছি না তবে কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেমন: পিয়াজ, রসুন, মাছ ইত্যাদি। এসকল খাবারের নিজস্ব কিছু গন্ধ রয়েছে যা খাওয়ার পরেও আপনার মুখে বিরাজ করে।
৩। অনেক সময় ঘুম থেকে উঠার পরে অনুধাবন করতে পারেন যে আপনার মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসছে। তবে এক্ষেত্রে এটাও বুঝতে হবে যে সকালে বা দিনের যেকোনো সময় ঘুম থেকে ওঠার পর মুখ থেকে যে দুর্গন্ধটা আসে সেটা নিতান্তই স্বাভাবিক। আমরা ঘুমালে আমাদের মুখে লালার পরিমাণ কমে যায় এর ফলে মুখের মধ্যে দুর্গন্ধযুক্ত ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ ঘটে ফলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
৪। মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে পানি কম পান করা। পানি কম করে পান করার ফলে আমাদের শরীর ও মুখ শুকিয়ে যায় ফলে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঘটে এবং মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
৫। ধূমপানের ফলেও আমাদের মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। আপনারা যারা ধূমপান করেন এই ধূমপানের ফলে মুখ শুকিয়ে যায় ফলে সেখান থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই দুর্গন্ধ দূর করতে হলে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
৬। আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে মুখে লালা কমে যাওয়া। যাদের মুখে লালার পরিমান কম হয়ে থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। অবশ্যই আপনাকে একজন ভালো ডেন্টিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে।
৭। উপরে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণে আপনার মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন: আপনি যদি ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার কিংবা ক্যান্সার বা কিডনি জনিত রোগে ভুগে থাকেন। তবে এসব রোগের জন্য যে মেডিসিন ডাক্তার প্রেসক্রিপ্ট করে থাকে সে সকল মেডিসিন খাওয়ার ফলেও আপনার মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বয়স্ক মানুষের মুখেও সাধারণভাবে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
এতক্ষণ আমরা জানলাম কিভাবে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এখন আমরা জানব কিভাবে আমরা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পারি। নিচে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার বেশ কিছু উপায় উল্লেখ করছি। যা আপনি ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন:
১। লেবু বা কমলা খাওয়া: লেবু বা কমলা তে ভিটামিন সি থাকে থাকে। আরে ভিটামিন সি আমাদের মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
২। পেয়ারা খাওয়া: আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে, পেয়ারা তে ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও পেয়ারার যে স্মাইল সেটিও আমাদের মধ্যে দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
৩। দই খাওয়া: প্রতিদিন প্রয়োজনে এক থেকে দুই চামচ দই খান। দইয়ের মধ্যে প্রোবায়োটিক্স থাকে যা আমাদের মুখে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার প্রোডাকশন বৃদ্ধি করে। যা আমাদের মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
৪। আনারস খাওয়া: মাঝে মাঝে আনারস খান। আনারস আমাদের মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
৫। এলাচ: এলাচ আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে খুব গুরুতর ভূমিকা পালন করে। আপনি খাওয়ার পরে একটি এলাচ মুখে নিয়ে চাবাতে পারেন এতে আপনার যেমন ফ্রেশ লাগবে তেমনি প্রাকৃতিকভাবে আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
৬। গ্রিন টি: আমরা হয়তো অনেকেই জানি গ্রিনটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। গ্রিন টি পান করার ফলে আপনার শরীরও চাঙ্গা থাকবে তেমনি আপনার মুখকে দুর্গন্ধ মুক্ত করবে। তাই সারাদিন নরমাল চা কফি পান করার থেকে গ্রিন টি পান করুন।
৭। বেশি বেশি পানি পান করুন: আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে আমাদের মুখে গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের মুখ শুকিয়ে যাওয়া। তাই আপনি যদি বেশি পানি পান করেন তবে আপনার মুখ শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবেন এবং আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। তাছাড়া বেশি বেশি পানি পান করলে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবেও সতেজ থাকবেন।
৮। মাউথ স্প্র: প্রয়োজনে ফ্রেশ মাউথ স্প্রে ব্যবহার করুন। এটি আপনার মুখের গন্ধ দূর করবে এবং আপনার কনফিডেন্ট লেভেল বাড়িয়ে দেবে। বাজারে অনেক ধরনের মাউথ স্প্রে পাওয়া যায়। ভালো ধরনের অরিজিনাল মাউথ স্প্রে নেয়ার চেষ্টা করবেন। বাজারে ভালো ভালো শপিং কমপ্লেক্স বা কসমেটিক্স এর দোকানে ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে মাউথ স্প্রে পাওয়া যায়।
৯। মাউথ ওয়াশ: মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। খাবার পরে, ঘুম থেকে ওঠার পর কিংবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। মাউথ ওয়াশ আপনি যে কোন শপিং মলে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মধ্যে পেয়ে যাবে। তবে মাউথ ওয়াশ কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে বুঝেশুনে কিনতে হবে। কেননা অনেক মাউথ ওয়াশ ব্যবহারের ফলে আপনার মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, দুর্গন্ধ উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়ার সাথে সাথে যে সকল ব্যাকটেরিয়া মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কাজ করে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া মাউথ ওয়াশ ব্যবহারের ফলে মুখের পিএইচ এর ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
১০। পুদিনা পাতা: দু তিন পিস পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে চাবাতে পারেন। পুদিনা পাতা শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তাছাড়াও এটি আমাদের মুখকে সতেজ রাখে।
শেষ কথা
উপরে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিভাবে মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং কিভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পারেন। উপরে উল্লেখিত নিয়মসমূহ যদি মেনে চলেন তবে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার সমস্যা পোহাতে হবে না। তবে আমাদের উচিত ছয় মাস অন্তর অন্তর একজন ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হওয়া। এতে করে আমাদের মুখের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে। আপনি যদি উপরের নিয়মসমূহ ঠিকভাবে মেনে চলতে না পারেন তবে প্রতিদিন অন্তত দুইবার সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাবার আগে দাঁত ব্রাশ করে তারপরে ঘুমান। এতে অন্তত আপনার দাঁতের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং মুখ ফ্রেশ থাকবে।
এছাড়াও আপনি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরো অনেক বিষয় জানতে পারবেন তাই অন্যান্য পোস্ট পড়ুন। ধন্যবাদ।