কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে

কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? তথ্যটি একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও একটু বেশি কষ্ট হয় তবুও সকল মা চাই তাদের সন্তান নরমাল ডেলিভারি এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আসুক। কিন্তু কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? এ সম্পর্কে জেনে থাকলে সেই খাবারগুলো সহজে খাওয়া যায়। এই আর্টিকেলে কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? তা জানাবো।

কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে

কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে - নরমাল ডেলিভারি হওয়ার খাবার

নরমাল ডেলিভারি অর্থ হচ্ছে এটি একটি স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। সাধারণত মানুষ মাসিকের রাস্তা দিয়ে সন্তান প্রসব করাকে চিকিৎসকের পরিভাষায় নরমাল ডেলিভারি বলা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। মানুষ অল্পতেই সিজার করে তাদের সন্তান বের করে নিচ্ছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি হওয়ার খাবার রয়েছে অবশ্যই সে খাবারগুলো ডেলিভারি হওয়ার আগে থেকেই খাওয়া উচিত।

একজন মা যদি তার সন্তানকে নরমাল পদ্ধতিতে পৃথিবীতে আনতে চায় তাহলে অবশ্যই কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। যদিও নরমাল ডেলিভারিতে প্রচুর পরিমাণে কষ্ট হয় তবুও এটি সহজ এবং মায়ের ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো পদ্ধতি। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার খাবার গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

  • খেজুর খেতে হবে
  • দই খাওয়া যায়
  • অতিরিক্ত পরিমাণে পানি
  • মিষ্টি আলু খেতে পারেন
  • বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার
  • কলা খেতে পারেন
  • লিভার খেতে পারেন

১। খেজুর খেতে হবে - আমরা জানি যে খেজুরের মধ্যে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রাচীনকালে মানুষ খেজুর খেয়ে শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা নিয়ে আসতো। যে সকল গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত খেজুর খায় সাধারণত তাদের প্রসবকালে কষ্ট অন্যদের তুলনায় একটু কম হয়ে থাকে।

যদি বাচ্চা ডেলিভারির এক মাস আগে থেকে মেয়েরা নিয়মিত পাঁচ থেকে ছয়টি করে খেজুর খায় তাহলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই যদি নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে চান তাহলে নিয়মিত খেজুর খাওয়া শুরু করুন।

২। দই খাওয়া যায় - প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার আমাদের শরীরকে ভিটামিন জোগাতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যা প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার পূরণ করে থাকে। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের জন্য এ ধরনের খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে চাইলে ডেলিভারির আগে নিয়মিত দই জাতীয় খাবার খান।

৩। অতিরিক্ত পরিমাণে পানি - আমরা জানি যে আমাদের শরীরে পানি ছাড়া কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে চান এবং নরমাল ডেলিভারিতে আপনার বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে চান তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে প্রতিনিয়ত।

৪। মিষ্টি আলু খেতে পারেন - মিষ্টি আলুর মধ্যে পুষ্টি উপাদানের ভরপুর রয়েছে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য যে সকল পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন সেগুলো এখানে পাওয়া যায়। ডেলিভারি হওয়ার আগে থেকে মিষ্টি আলু খাওয়া শুরু করুন। এটি বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

৫। বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার - আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমরা ইতিমধ্যেই তা জানি। যদি গর্ভবতী মাকে বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার খাওয়ানো যায় তাহলে এটি তার শরীরের জন্য আরো উপকারী। বাদামের বীজ, সূর্যমুখীর বীজ তিল, কুমড়োর বীজ সহ বিভিন্ন ধরনের বীজে রয়েছে উপাদান। যা গর্ভবতী মায়ের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

৬। কলা খেতে পারেন - গর্ভবতী মায়ের শরীরের গ্লুকোজ এর চাহিদা মেটাতে কলা কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কলায় যে শুধু উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম থাকে তা নয় এতে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি। গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

৭। লিভার খেতে পারেন - গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রাণিজ প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহিলাদের শরীরের জননতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে লিভার। তাই গর্ভাবস্থায় নারীদের লিভার খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় ব্যথা কমাতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে লিভারে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো।

আরও পড়ুনঃ ১ থেকে ১২ মাস বয়সী নবজাতক শিশুর খাবার তালিকা

গর্ভাবস্থায় কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত

মেয়েরা গর্ভাবস্থায় একটু বেশি সতর্কতার সাথে থাকে। কারণ এ সময়টি মেয়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি গর্ভবতী মেয়ের গর্ভাবস্থায় কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত? এ বিষয়ে ধারণা রাখা জরুরী। কারণ এতে করে গর্ভবতী মা এবং তার শিশুর দুজনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কারণ পৃথিবীতে প্রতিটি শিশুর জন্য তার মা হলো বট বৃক্ষের মত। 

সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের জন্য গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় গর্ভবতী নারীর খাবারে অরুচি বমি বমি ভাব, অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়া এবং রক্তশূন্যতার মধ্যে সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের গর্ভাবস্থায় কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত? এই সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের গর্ভবতী মায়ের সুস্বাস্থ্য এবং সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের খাদ্য তালিকায় আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের সঙ্গে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম থাকে এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।

গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভে শেষ দুই মাস তাদের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদার সঙ্গে অতিরিক্ত বিশ গ্রাম আমিষ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। খাবারের যাতে 500 মিলিগ্রাম অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও পাঁচ মিলিগ্রাম লৌহ থাকে। গর্ভবতী নারীর যেন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয় এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ এবং বাদাম খাওয়া উচিত।

এছাড়া গর্ভাবস্থায় আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। কারণ আয়োডিন শিশুর বুদ্ধি বা মস্তিষ্কে বর্ধনের জন্য অনেক কার্যকরী। বিশেষ করে গর্ব অবস্থায় প্রথম দিকে যেখানে গর্ভস্থ শিশুর ওজন প্রতিদিন বৃদ্ধি পায়। গর্ব অবস্থায় শেষ দুই মাস শিশুর মোট ওজন অর্ধেক বৃদ্ধি পায়। সেই জন্য মায়ের পুষ্টির দিক বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় সর্তকতা

গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু সতর্কতা রয়েছে। খাবার মানুষের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার গুরুত্ব আরো বেশি। কিন্তু গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে এই অবস্থায়। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।

২। যদি এমন কোন ওষুধ থাকে গর্ভবতী নারী প্রতিদিন খেয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

৩। যদি পেটের ভেতরে শিশুর নাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটি বুঝতে পারার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

৪। গর্ভবতী অবস্থায় অনেক সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে। জোরে হাটা অথবা দৌড়ানো যাবে না। ভারী কোন ধরনের কাজ করা যাবে না।

৫। গর্ভবতী অবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমন থেকে বিরত থাকতে হবে। উঁচু-নিচু পথ ভ্রমণ করা যাবেনা এবং যানবাহনে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করা যাবে না।

গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না

কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? তথ্যগুলো জেনে অবশ্যই সেই খাবারগুলো খেয়ে আমাদেরকে নরমালে ডেলিভারি করাতে চেষ্টা করতে হবে। গর্ভাবস্থায় অনেক ধরনের খাবার রয়েছে যেগুলো মায়ের এবং সন্তানের উভয়ের জন্য উপকারী হয় না। তাই গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না সেই সম্পর্কে জানতে হবে।

  • চা কফি খাওয়া যাবে না
  • কলিজা খাওয়া যাবে না
  • কাঁচা ডিম খাওয়া যাবে না
  • বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না

১। চা কফি খাওয়া যাবে না - অনেক সময় চা এবং কফি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি করে থাকে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। একজন গর্ভবতী মা প্রতিদিন 200 মিলিগ্রাম কফি গ্রহণ করতে পারবেন।

২। কলিজা খাওয়া যাবে না - কলিজা অথবা কলিজা দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ভিটামিন এ বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে খুবই বিপদজনক। এ সময়ে আপনার জন্য কতটুকু ভিটামিন গ্রহণযোগ্য সেটা একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলে খেতে হবে।

৩। কাঁচা ডিম খাওয়া যাবে না - আমরা জানি যে কাঁচা ডিম খুবই ভালো স্বাস্থ্যের জন্য। অনেকেই গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম খেয়ে থাকে কিন্তু এটি ভুল ধারণা। যদি ডিম রান্না করে খাওয়া হয় তাহলে সেটি পুষ্টিকর এবং খেতে কোন সমস্যা নাই কিন্তু কাঁচা ডিম খাওয়া যাবেনা।

৪। বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না - বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে বার্গার এবং পিৎজা জাতীয় খাবার গুলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই খাবারগুলো গর্ভবতী মায়ের এবং সন্তানের বিভিন্ন রকমের ক্ষতি করে থাকে তাই গর্ভ অবস্থায় খাবারগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।

আমাদের শেষ কথাঃ কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত? কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে? নরমাল ডেলিভারি হওয়ার খাবার, গর্ভাবস্থায় সতর্কতা এবং গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা। এ বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভবতী মা হয়ে থাকলে অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী।

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অবশ্যই কি খেলে সহজেই নরমাল ডেলিভারি হবে জেনে এই খাবারগুলো খেতে থাকুন।

1 Comments

Previous Post Next Post